Wednesday, 24 June 2015

লগ্নভ্রষ্টা

পালকি চড়ে বর এসেছে
            টোপর মাথায় দিয়ে,
সঙ্গে এসেছে বরকর্তা,
               বরযাত্রীদের নিয়ে

শাঁখ বাজায় মেয়েরা সব,
             জোরে উলুধ্বনি দেয়,
শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে
              বরকে বরণ করে নেয়

বরের বাবা বরকর্তা
               লোকটা সোজা নয়,
ছাদনাতলায় বসে সে
                  স্পষ্ট ভাষায় কয়

শুনুন শুনুন বেয়াইমশাই,
                   শুনুন আমার বচন,
বলি পনের টাকাটা মশাই
                আমায় দেবেন কখন?”

শুনে কনের বাবা বলে
                তখন জোড় হাত করে,
বিয়ের পরে পনের টাকা
               দেব আমি শোধ করে

টাকা না দিলে মশাই,
               হবে নাকো বিয়ে,
চললাম আমি বর আর
                বরযাত্রীদের নিয়ে

কনের বাবা বলে তখন
              - শুনুন বেয়াই তবে,
এই লগ্নে বিয়ে না হলে
              মেয়ে যে লগ্নভ্রষ্টা হবে

কান্না দিয়ে জীবন গড়া
               মুছে দাও গরীবের কান্না,
সোচ্চার কণ্ঠে বলো সবাই,
           "পন দেব না, পন নেব না


বি. দ্র. – পনপ্রথা  সামাজিক জীবনে জ্বলন্ত অভিশাপ
পন দেওয়া বা নেওয়া দুটোই সামাজিক অপরাধ
আসুন আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই
একযোগে সকলেই বলি-
পন নেব না, পন দেব না





Monday, 22 June 2015

           প্রভাত ও সন্ধ্যা
প্রভাত সূর্য রং ছড়ায়
                পূব আকাশের কোণে,
মাধবী, মালতী, কেতকী, যুঁথী
                ফুল ফোটে বনে বনে

সোনালী সূর্য কিরণ ছড়ায়
                 এই ধরণীর তলে,
প্রভাতে ফোটে সোনার কমল
                   নয়ন দিঘির জলে

ভোরের হাওয়া সৌরভ ছড়ায়,
                 ছুটে আসে মধুকর,
মধু খেয়ে ঘুমায় অলি,
                   কমল ফুলের উপর

উঠল আকাশে সাঁঝের তারা
               দিন হল অবসান,
মায়ের কোলে ঘুমায় শিশু
               শুনে ঘুম পাড়ানি গান

উঠল আকাশে সন্ধ্যাতারা,
                   চাঁদ হেসে কথা কয়,
মায়ের পাশে ঘুমায় ছেলে,

                     মা শুধু জেগে রয়



           কেষ্ট দাসী পিসি

বাগদী পাড়ার কেষ্ট দাসীর
            গাঁয়ের মাঝে ঘর
আত্মীয় স্বজন কেহ নাই তার
              আপন কেবা পর

পাড়ার সকল ছেলে তাকে
             পিসি বলে ডাকে,
তেলেভাজা, ফুলুরি সে
              মাটির ভাঁড়ে রাখে

পাড়ার কোন ছেলে যদি
             তার বাড়িতে যায়,
মুড়ির সাথে তেলেভাজা
             আদর করে খাওয়ায়

স্নান করে সে রোজ সকালে
               নয়ন দিঘির জলে,
কপালে তিলক চন্দন এঁকে,
              জয় রাধা কেষ্ট বলে

করতাল বাজিয়ে গায় সে
               নিত্য হরে কৃষ্ণ নাম
জয় রাধা রাধা কেষ্ট কেষ্ট
                পিসি জপে অবিরাম

কাল পাড় সাদা শাড়ি,
             বেলের মালা গলায়,
সোয়ামী তার মরে গেছে,
              তিনকূলে কেউ নাই

ছেলেমেয়ে নাইকো কেহ,
            করবে কাকে আদর?
পাড়ার সবাই তার আপন
               নয়কো কেহ পর

ঝড়ো হাওয়ায় সেদিন পিসির
            উড়লো খড়ো চাল,
দুঃখে গড়া জীবন পিসির,

              দুঃখ কষ্ট, চিরকাল





        রথের মেলা

গাঁয়ের মাঠে বসেছে আজ
            রথযাত্রার মেলা,
ম্যাজিক শো, পুতুল নাচ ও
              সার্কাসের খেলা

ছোট বড় দোকান কত
          বসেছে সারি সারি,
হরেক মাল পাঁচ সিকে,
           ডাকছে গলা ছাড়ি

তেলেভাজা, ফুলুরি আর,
           সন্দেশের দোকান,
মাইকের বিকট চিকারে
           ঝালাপালা কান

পাঁচ আনায় কেনা পুতুল,
            তিন আনায় বাঁশি,
তার চাইতেও বেশি দামী
           শিশুর মুখের হাসি

হাসির চেয়েও কান্না দামী
           আজকে রথের মেলায়,
মেলায় গিয়ে খেলনা কেনার
             পয়সা যাদের নাই

দাওয়ায় বসে কাঁদছে খুকি,
            আজকে সারাবেলা
রাগ করেছে, যাবে না আর

            আজকে রথের মেলা

Thursday, 18 June 2015

      আমগাছের ব্যথা

বাড়ির উঠোনটার পাশে
আছে একটি আমের গাছ
সকাল হলেই গাছের ডালে,
পাখিরা সব করে নাচ

পাড়ার সকল ছেলে জুটে
সেই আম তলাতে এসে,
গামছায় বেঁধে মুড়ি এনে
খায় সবাই বসে বসে

চৈত্র মাসে আমের গাছে
কত আমের মুকুল ধরে
বৈশাখে কাঁচা আমের গন্ধে
সবার পরাণ পাগল করে

জ্যৈষ্ঠ মাসে আম পাকে
খেতে লাগে অতি মিঠে
সেই পাকা আমের গন্ধে
সারা বাড়ি ভরে ওঠে

হঠাৎ সেদিন বিকেল বেলায়
দারুণ কালবৈশাখীর ঝড়ে,
মড় মড় করে আমগাছের
শুধু দুটো ডাল ভেঙে পড়ে

আষাঢ় মাসের বাদলা দিনে
আবার সেই গাছে পড়ল বাজ
গাছতলায় আর কেউ আসে না
সে হলো নীরব সাক্ষী আজ

গাছের পাতা ঝরে গেছে সব
শুকিয়ে গেছে গাছের ডাল,
ব্যথাভরা অভিমান নিয়ে আজও
গাছ কেঁদে মরে চিরকাল




        রাত হলে অবসান

পূবের সূর্য রং ছড়ায় পশ্চিমের পানে,
দিনের শেষে সূর্য ডোবে বাঁশের বাগানে
ঘাটের মাঝি নৌকা বেঁধে চলে গেছে ঘরে,
নদীর ঘাটে নৌকা কাঁদে, শুয়ে বালির চরে
আলতা পায়ে সিঁদুর পরা ঘোমটা মাথায়,
নববধূ তুলসীতলায়, প্রদীপ জ্বালায়
নীল আকাশে চাঁদ হাসে, ফুটে ওঠে তারা,
মন বাউল মিঠে সুরে, বাজায় একতারা
মন্দির মাঝে ঘণ্টা বাজে, মধুর হরিনাম,
ঝুমুর দলের নুপুর বাজে, যাত্রা-কবি গান
জোছনা রাতে তারারা জাগে, নীল আকাশের গায়,
বাগানের ফুলগুলি সব, ঘুমায় শীতল হাওয়ায়
উষার আলো উঠে ফুটে, রাত হলে অবসান,
প্রভাত পাখির কণ্ঠে শুনি, ঘুম ভাঙানোর গান



      ফলের বাজার

গাঁয়ের প্রান্তেতে বসে ফলের বাজার,
আম, জাম, কলা, লিচু, নারিকেল আর
কমলালেবু, বাতাপি, পেঁপে ও আঙুর,
আপেল, বেদানা আর সুমিষ্ট খেজুর
পাকা আমের সুগন্ধে, ভরে ওঠে মন,
কাঁঠালের পাশে মাছি, উড়ে ভন্ ভন্
কাঁন্দি কাঁন্দি চাপা আর মর্তমান কলা,
চড়া সুরে হেঁকে যায়, দোকানীর গলা
সবেদা, পেয়ারা, কুল,মিঠে নাশপাতি,
ফল-দোকানীর সাথে, কথা কাটাকাটি
ফলের মোরব্বা খেলে, হরষিত মন,
ফল কিনে যায় বাড়ি, যত ক্রেতাগন
সবে মিলে খুশি মনে, করে ফলাহার,

অনাহারে থাকে হেথা, ফলের বাজার