Thursday, 21 May 2015

               গরীবের কান্না

কাছারীবাড়ীতে আছেন বসেজমিদার জয়ন্তবল্লভ রায়
খাজাঞ্চি আসিয়া, বাবুরে কহে-“সুখেনের খাজনা অনাদায়
খাজনা না পেয়ে জমিদারবাবু, ক্রোধেতে উঠলেন জ্বলে
কোথায় সুখেন? বেঁধে আনো তারেপেয়াদারে ডাকি বলে
জমিদারবাবুর হুকুম পেয়ে পেয়াদা তখনিই ধায়,
সুখেন তখন, ভাবে বসে বসে, তার বাড়ির আঙিনায়
পেয়াদা কহে- “চল ব্যাটা পাজিজমিদারবাবুর তলব
খাজনা দিবি না , চালাকি পেয়েছিসকরে কত কলরব
সুখেনের বউ, শুনি ধীরে কহে-“দিতেছো কেন গালি?
পেয়াদাকে তুই জবাব করিস, আঃ! হারামজাদী শালী!”
শুনিল না কথা, পেয়াদা সুখেনের, কোমরে দড়ি বাঁধে
দেখিয়া শুনিয়া, ফুঁপিয়া ফুঁপিয়া, সুখেনের বউ কাঁদে
টানি জোর করে, নিয়ে গেল ধরে জমিদারবাবুর কাছে
সুখেনের বউ, কেঁদে কেঁদে হায়, চলে তার পাছে পাছে
জমিদারবাবু চাবুক চালায়, সুখেনেরে কাছে পেয়ে
ঝরিল কত, অঝোরে রক্ত, সুখেনের গা বেয়ে
চাবুকের ঘায়ে, রক্ত ঝরে মুখে, সুখেন বাবুরে কয়-
সুখেনের চোখ, জলে ভরে আসে, পারিষদ নীরব রয়
সুখেন কহে, “মেরো না আমারে. ধরি তব দুটি পায়
আমি উপবাসী, খাই নি কিছু, পরাণটা বুঝি যায়
এবছরে হায়, প্রবল বন্যায়. ভেসে গেছে মোর ধান,
খেতের ফসল, হয়নি কিছুই. কত গেছে লোকসান
দোহাই বাবু!” হাতজোড় করে, সুখেন বাবুরে কহে-
খাজনা আমার, মাফ করো বাবু!”  চক্ষে ধারা বহে
আমি যে গরীব, গোটা পরিবার, পাই না দুবেলা খেতে,
করে দাও মুকুব, জমির খাজনা, পারিব না আর দিতে
খাজনা দিবি না চালাকি নাকি?” চাবুক হাতে বাবু বলে-
সপাং সপাং চাবুক চালায়, ভাসে সুখেন আঁখিজলে
সুখেনের বউ, ঘোমটা জড়িয়ে, সম্মুখে দাঁড়াল আসি,
কহে-“শোন রে পিশাচ! গরীবের কান্নায় তোদের অট্টহাসি
গরীবের দুঃখ, বোঝে না তো কেহ, কান্নার দেয় না দাম,
স্বামীরে আমার রক্ষা করো, কোথা ওহে গরীবের ভগবান!”



No comments:

Post a Comment