Saturday, 23 May 2015

অমল ও দইওয়ালা

দই, দই ভালো দই!”
দইওয়ালা রোজ হাঁকে,
দইওয়ালার ভালো দই
মাটির ভাঁড়ে থাকে

দধির বাঁক কাঁধে নিয়ে
সে ঘুরে  পাড়াময়,
দইওয়ালাকে দেখে অমলের
দই খেতে সাধ হয়

দইওয়ালা! ও দইওয়ালা!
বারেক ফিরে চাও,”
দই কিনবে? তবে কেন আমার
বেলা বইয়ে দাও?”

কেমন করে কিনবো দই,
আমার তো পয়সা নাই
অমলের কথা শুনে তার
পরাণ জুড়িয়ে যায়

দইওয়ালা! ও দইওয়ালা! তুমি
আসছো কোথা থেকে?
তোমাদের গ্রাম সেই বুঝি কি
শ্যামলী নদীর বাঁকে?

পাঁচমুড়ো পাহাড়ের তলায়
শ্যামলী নদীর ধারে,
তোমাদের গ্রামের ডাঙায় কত
গরু বাছুর  চরে

মেয়েরা সব জল আনতে যায়
রাঙা শাড়ি পরে,
তোমাদের গ্রামে যেতে আমার
ভারি ইচ্ছে করে

দধির বাঁক নামিয়ে মাটিতে
দইওয়ালা মোছে ঘাম,
এক ভাঁড় দই খাও বাছা তুমি
লাগবে না কোন দাম

ও দইওয়ালা! তোমার সুরটা
শিখিয়ে দাও আমায়,
ভেসে আসা যে সুরে মন
উদাস হয়ে যায়

কেমন সুরে তুমি বল
দই- দই ভালো দই!
তোমার সাথে সুর মেলাতে
পারি আমি কই?”

দইওয়ালা কয়- “হায় পোড়াকপাল!
এ সুর কি শেখাবার সুর?
না দইওয়ালা, ঐ সুর মেলায়
দূর হতে বহুদূর

দই বেচতে যাবে কেন বাবা,
কেনই বা দই বেচবে?
অত অত পুঁথি পড়ে তুমি
পণ্ডিত হয়ে উঠবে

না না দইওয়ালা, আমি কখনও
পণ্ডিত হতে চাই না
কল্পনার চোখে ভেসে ওঠে মোর
ছোট্ট সেই গ্রামখানা

দইওয়ালা কয়সারাজীবন আমি
দই বেচে কি পেলাম?
দই বেচতে যে কত সুখ তা

তোমার কাছে শিখে নিলাম


  জামাইষষ্ঠীর আয়োজন



জামাই ষষ্ঠীর দিনে, ভারি ধূমধাম,
ঘরদোর পরিস্কার, অতি ছিমছাম
কার্পেটে জড়ানো মেঝে, সোফা গদিআঁটা,
পালঙ্কে চাদর দামী, তাতে নক্সাকাটা

জানালার পর্দাখানি, অতি মনোহর,
সুসজ্জিত দরজায়, শোভিছে ঝালর
টেবিলেতে ফুলদানি, সযতনে রাখা,
সম্মুখে পূজার ঘর, আলপনা আঁকা

জামাই আসিছে, তাই পড়ে যায় সাড়া,
শাশুড়ির ঘুম নেই, কত কাজে তাড়া
শ্বশুর দায়িত্বহীন, বসে থাকে ঘরে,
শাশুড়ি হিসাবমত, কেনাকাটা করে

ত্রুটি যেন নাহি হয়, জামাই আসিলে,
যতনে সাজায় ঘর, তিন শালী মিলে

Thursday, 21 May 2015




                রাতের আঁধার



রাতের আকাশে তারাগুলো সব
মিটিমিটি করে জ্বলে,
নির্জন রাতে ডেকে ওঠে পেঁচা
ছাতিম গাছের ডালে

জোছনা বিহীন আঁধার রাতি,
ছোট জোনাকিরা দেয় আলো,
চাঁদ নেই আকাশে তবুও
রাত দেখতে লাগে ভালো

সারা বিশ্ব পড়েছে ঘুমায়ে
শুধু ঘুম নেই মোর চোখে,
বিষন্ন রাত্রি কেঁদে মরে হেথা
এই ঘুমন্ত পৃথিবীর বুকে

ব্যথায় ভরা হৃদয়ে কবির
জমেছে কান্নার পাহাড়,
রাঁতের আঁধারে কেঁদে মরে
হেথা শুকনো বাঁশের ঝাড়

               গরীবের কান্না

কাছারীবাড়ীতে আছেন বসেজমিদার জয়ন্তবল্লভ রায়
খাজাঞ্চি আসিয়া, বাবুরে কহে-“সুখেনের খাজনা অনাদায়
খাজনা না পেয়ে জমিদারবাবু, ক্রোধেতে উঠলেন জ্বলে
কোথায় সুখেন? বেঁধে আনো তারেপেয়াদারে ডাকি বলে
জমিদারবাবুর হুকুম পেয়ে পেয়াদা তখনিই ধায়,
সুখেন তখন, ভাবে বসে বসে, তার বাড়ির আঙিনায়
পেয়াদা কহে- “চল ব্যাটা পাজিজমিদারবাবুর তলব
খাজনা দিবি না , চালাকি পেয়েছিসকরে কত কলরব
সুখেনের বউ, শুনি ধীরে কহে-“দিতেছো কেন গালি?
পেয়াদাকে তুই জবাব করিস, আঃ! হারামজাদী শালী!”
শুনিল না কথা, পেয়াদা সুখেনের, কোমরে দড়ি বাঁধে
দেখিয়া শুনিয়া, ফুঁপিয়া ফুঁপিয়া, সুখেনের বউ কাঁদে
টানি জোর করে, নিয়ে গেল ধরে জমিদারবাবুর কাছে
সুখেনের বউ, কেঁদে কেঁদে হায়, চলে তার পাছে পাছে
জমিদারবাবু চাবুক চালায়, সুখেনেরে কাছে পেয়ে
ঝরিল কত, অঝোরে রক্ত, সুখেনের গা বেয়ে
চাবুকের ঘায়ে, রক্ত ঝরে মুখে, সুখেন বাবুরে কয়-
সুখেনের চোখ, জলে ভরে আসে, পারিষদ নীরব রয়
সুখেন কহে, “মেরো না আমারে. ধরি তব দুটি পায়
আমি উপবাসী, খাই নি কিছু, পরাণটা বুঝি যায়
এবছরে হায়, প্রবল বন্যায়. ভেসে গেছে মোর ধান,
খেতের ফসল, হয়নি কিছুই. কত গেছে লোকসান
দোহাই বাবু!” হাতজোড় করে, সুখেন বাবুরে কহে-
খাজনা আমার, মাফ করো বাবু!”  চক্ষে ধারা বহে
আমি যে গরীব, গোটা পরিবার, পাই না দুবেলা খেতে,
করে দাও মুকুব, জমির খাজনা, পারিব না আর দিতে
খাজনা দিবি না চালাকি নাকি?” চাবুক হাতে বাবু বলে-
সপাং সপাং চাবুক চালায়, ভাসে সুখেন আঁখিজলে
সুখেনের বউ, ঘোমটা জড়িয়ে, সম্মুখে দাঁড়াল আসি,
কহে-“শোন রে পিশাচ! গরীবের কান্নায় তোদের অট্টহাসি
গরীবের দুঃখ, বোঝে না তো কেহ, কান্নার দেয় না দাম,
স্বামীরে আমার রক্ষা করো, কোথা ওহে গরীবের ভগবান!”



Saturday, 16 May 2015



                         শুভ নববর্ষ

নববর্ষ আগমনে খুশি সবাকার,
প্রেম প্রীতি ভালবাসা, প্রীতি উপহার
নতুন সকালে রবি ছড়ায় কিরণ,
মন্দ মন্দ বহিতেছে মুক্ত সমীরণ

বৃক্ষশাখে গাহে পাখি, সুমধুর গান,
ভালবাসা বিনিময়, শুভেচ্ছা প্রদান
ফুটেছে কুসুম কত পুষ্পিত কাননে,
মধুকর আসে নিত্য মধু আহরনে

নব সাজে সুসজ্জিত সব শিশুগণ,
সুমধুর বাক্যে তারা করে আলাপন
পুষ্পে পুষ্পে সুসজ্জিত বিপণি সকল,
ক্রেতাগণে করে সদা, ভিড় অবিরল

নববর্ষের শুভেচ্ছা করিও গ্রহণ,

বাংলা কবিতার পাঠক-কবিগণ
গাঁয়ের হাট

সকাল হতেই মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি নামে ঝিরঝির,
গাঁয়ের মাঠে হাট বসেছে
লোকজনের ভিড়

পাঠশালায় শিশুরা বসে
পড়িছে নতুন পাঠ,
পথের ধারে বটের তলায়
বসেছে আজ হাট

আদুল গায়ে গামছা কাঁধে
নৌকা বেঁধে ঘাটে,
ঘাটের মাঝি চলেছে সেও
রবিবারের হাটে

হাঁকাহাঁকি আর ডাকাডাকি
গোলমাল করে কত,
দরাদরি করে, বেচাকেনা করে
দাম দেয় ঠিকমত

দোকানীরা সব দোকান পাতে
সাজায় ওজনদাঁড়ি,
বেচাকেনা সেরে হাটুরেরা সবে
চলিছে আপন বাড়ি

বেড়ে ওঠে বেলা, দশটা বাজে
ফাঁকা হয় গোটা মাঠ
নির্জন মাঠে নীরবতা নামে,
পড়ে থাকে একা হাট