Monday, 4 July 2016

আমাদের এই ছোট গ্রাম

আমাদের ছোট গাঁয়ে আছে ছোট ছোট মাটির বাড়ি,
গাঁয়ের পথে পুকুরপাড়ে আছে তাল খেজুরের সারি।
গাঁয়ের পাশ দিয়ে অজয় নদী বয়ে চলে অবিরাম,
গাছের সবুজ ছায়ায় ঘেরা আমাদের এই ছোট গ্রাম।

গাঁয়ের প্রান্তে বটের তলায় আছে শ্রীজগন্নাথের রথ,
গাঁয়ের মাঝে চারপাশে তার আঁকা বাঁকা গলি পথ।
আমবাগানের ভিতর দিয়ে আকাঁ বাঁকা গলি পথে,
কলসীকাঁখে গাঁয়ের বধূরা আসে রোজ জল নিতে।

পদ্ম দিঘির কালো জলে রোজ ছেলেরা সাঁতার কাটে,
পানকৌড়ি রোজ ডুব দিতে আসে পানাপুকুরের ঘাটে।
গাঁয়ের জেলে মাছ ধরে পুকুরেতে রোজ জাল ফেলে,
শংখচিল উড়ে চলে আকাশের গায়ে দুটি পাখা মেলে।

আমাদের গাঁয়ের মাঝখানে আছে নাটশালা চালাঘর,
সন্ধ্যায় খোল ও করতাল বাজে বসে কীর্তনের আসর।
বাঁশ বাগানের মাথার উপর দিয়ে উঠে চাঁদ আর তারা,
পাহারাদার লণ্ঠণ হাতে রোজ সারা রাত দেয় পাহারা।

Tuesday, 28 June 2016

ফুল ফোটে বনে বনে

ফোটে ফুলকলি বহিছে সমীর
প্রভাত সময় কালে,
করিছে কূজন প্রভাত পাখিরা
বসিয়া গাছের ডালে।

দিঘিতে ফোটে কুমুদ কমল
মরাল জলে ভাসে,
বাগানে ফোটে টগর বকুল
গগনে অরুণ হাসে।

গাঁয়ের রাখাল নিয়ে গরুপাল
তরুছায়ে করে খেলা,
গাঁয়ের চাষীরা লাঙল চালায়
আসে ফিরে সন্ধ্যাবেলা।

পান্থ পথিক আদুল গায়ে
ছাতা নিয়ে পথে চলে,
নির্জন দুপুর অলস বিবশ
শঙ্খচিলের কোলাহলে।

শান বাঁধানো পুকুরঘাটে
ধোপারা কাপড় কাচে,
বীর হনুমান ল্যাজ ঝুলিয়ে
বসে থাকে বটগাছে।

বিকেল হলেই বেলা পড়ে
সূর্য্যি ডোবে আঁধার নামে,
ক্লান্ত পাখিরা বাসায় ফেরে
প্রদীপ জ্বলে সারা গ্রামে।

না ফোটা ফুলের কলিরা
সবাই ঘুমায় ক্লান্ত হয়ে,
রাতের রজনীগন্ধারা জাগে
শত দুঃসহ ব্যথা সয়ে।

রাত কেটে শেষে সূর্য ওঠে
পূব আকাশের কোনে,
বহে সমীরণ, পাখীর কূজন
ফুল ফোটে বনে বনে।

পাড়ার হীরু সর্দার

আছে আমাদের পাড়াতে হীরু নামে এক সর্দার,
লাঠি হাতে হাঁকে রাতে “জাগতে রহো!খবর্দার”।
সারা রাত জেগে জেগে গাঁয়ে দেয় সে পাহারা,
ছিঁচকে চোর, দেয় দৌড়, দেখে বিকট চেহারা।

মালকোঁচা মেরে হীরু বাঁধে ধুতিখানা কোমরে,
আদুল গায়ে, খালি পায়ে, লাঠি ধরে শক্ত করে।
রাতবিরেতে কুকুর বেড়াল পালায় লাঠির ভয়ে,
চামচিকে আর বাদুড় ওড়ে মাথার উপর দিয়ে।

একদিন রাতে এলো এক মোটা  কেঁদো বাঘ,
কেঁদো বাঘ দেখে হীরুর হলো যে ভারি রাগ।
বাঁচার লড়াই তরে ঘুরায় লাঠি জোরে জোরে,
বন বন ঘোরে লাঠি, তাই বাঘ পালায় দৌড়ে।

হ্যারিকেন লণ্ঠণটা হীরু ধরে তার নিজ হাতে,
পাহারায় রত হীরু জেগে থাকে রোজ রাতে।

Tuesday, 19 January 2016

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, থাকে মোদের গাঁয়ে,
পাড়ার কারো ব্যামো হলে, তাকে দেয় সারিয়ে
বৈদ্য পাড়ার বৈদ্য মশাই, লোকটি খারাপ নয়,
পাঁচ পুরিয়ার পাঁচ সিকে দাম, স্পষ্ট ভাষায় কয়

ডাক্তার কবিরাজ গাঁয়েতে, আর তো কেহ নাই,
ব্যামো হলো আমরা সবাই, তার কাছেতেই যাই
এই তো সেদিন, পাড়ার পাঁচুর, হল ভীষণ জ্বর,
জ্বরের ঘোরে সর্বাঙ্গ তার, কাঁপছে থরো থর

বৈদ্য পাড়ার বৈদ্যি মশাই, তাকে দেখার পরে,
ভয় পেয়ো না, দিচ্ছি ওষুধ, উঠবে তুমি সেরে
এই না বলে, বৈদ্যিমশাই, ওষুধ দিল তারে,
চার পুরিয়া দিচ্ছি ওষুধ, খাবে ভাল করে

যোলো আনায় চার পুরিয়া, ওষুধ খাবার পর,

ভাল হয়ে উঠল পাঁচু, নাইকো তার আর জ্বর










পৌষ সংক্রান্তির দিনে

পৌষ মাসে পিঠেপুলি, মহা ধূমধাম,
ঘরে ঘরে পিঠে গড়ে, ধন্য পল্লীগ্রাম
দুধপুলি, গুড় পিঠে, নারিকেল আর,
সকলে করিছে পিঠে, সকল প্রকার

গুড় আর তিল দিয়ে, গড়ে পিঠে কেউ,
সারা গাঁয়ে বয়ে যায়, আনন্দের ঢেউ
সরা পিঠে, বাটি পিঠে, দুধ চাঁছি আর,
নলেন গুড়ের গন্ধ, ভাসে চারিধার

পৌষ মাসে শেষ দিনে, টুসু জাগরণ,
সারা রাত টুসু গান, হরষিত মন
পরদিন অতি ভোরে, টুসুর ভাসান,
চৌদলে সাজায়ে সবে, নদীঘাটে যান

নদীতে মকর স্নান, সকলেই করে,

নদীঘাটে মেলা বসে, ঘাট যায় ভরে










মকর সংক্রান্তির মেলা
নদীর ঘাটে বসেছে আজ,
মকর সংক্রান্তির মেলা,
বসেছে দোকান সারি সারি,
আর সার্কাসের খেলা

দু আনার কেনা মাটির পুতুল,
তিন আনার বাঁশি,
হরেক মাল পাঁচ সিকে দাম,
সেথায় ভিড় বেশি

ময়রা ভোলা বসেছে দোকানে,
টাঙায়েছে সামিয়ানা
রসগোল্লা আর পানতোয়া,
সব পাবে আনা আনা

আলুর চপ ও তেলেভাজা,
পাবে তার দোকানে,
চায়ের ও পানের দোকান,
বসেছে এক কোণে

মনিহারীর দোকান কত,
বসেছে সারি সারি,
পুঁতির মালা ও কানের দুল,
দেখতে সুন্দর ভারি

চুড়ি, মালা, খোপার বল,
কিনতে ইচ্ছে হয়,
দাম শুনে মাথায় হাত,
কিনতে লাগে ভয়

মেলার মাঝে খোকন সোনা,
কাঁদছে বসে একা
হারিয়ে গেছে বাবা মা তার,
পায় না কেন দেখা ?

হাসির চেয়ে কান্না দামী,
আজকে মেলার ভিড়ে,
বসেছে মকর-সংক্রান্তির মেলা,

অজয় নদীর তীরে










আমার গাঁ ও সবজ ছায়া
যে দূরে সবুজ ছায়ায়, ছোট্ট আমার গ্রাম,
সামনে দিয়ে অজয় নদী, বইছে অবিশ্রাম
আমার গাঁয়ের পশ্চিম দিকে, কাঁটা কুলের বন,
ভোরের বেলা মোরগ ডাকে, ভরে উঠে মন

আমার গাঁয়ের উত্তর দিকে, তাল খেজুরের সারি,
পূবের পানে, সবুজ খেত, দেখতে সুন্দর ভারি
আমার গাঁয়ের দক্ষিণ দিকে, অজয় নদী বয়,
নদীর ঘাটে, সরু বালুচরে, নৌকা বাঁধা রয়

আমার গাঁয়ে রাঙামাটির, লাল ধূলো সরানে,
একতারাতে, মিঠে সুর, আছে বাউল গানে
আমার গাঁয়ে, আমবাগানে, কোকিল পাখি ডাকে,
পল্লীবধূ যায় জল আনতে, কলসি নিয়ে কাঁখে

সুর্য্যি ডোবে, সন্ধ্যা আসে, নামে সাঁঝের আঁধার,
জোছনায় আলো ঝরে, আমার গাঁয়ের চারিধার